ফেইসবুক সহ অনলাইন যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ এবং আমাদের প্রতিক্রিয়া


অনেক দিন পর ব্লগে লিখতে বসলাম। সাধারণত ব্লগে এখন তেমন আর লেখা হয়ে উঠেনা। তারপরও পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে না লিখে আর পারলাম না।

দেশ আজ এক চরম সময় পার করছে। একদিকে সরকার ও আইনশৃংখলা বাহীনি, অন্যদিকে দেশের অনলাইন ব্যবহার কারী জনগণ। এখানে বলে রাখা ভালো অনলাইন ব্যবহারকারী জনগণের মধ্যে আবার তিনটি ভাগ আছে। একটি হলো সরকারের এ কাজের চরম বিরোধীতা ও সমালোচনা কারী, দ্বিতীয়টি হলো সরকারের পক্ষ অবলম্বনকারী ও সমর্থক এবং তৃতীয়টি হলো নীরপেক্ষ বা কোন পক্ষেই যাদের কোন অবস্থান বা সমর্থন নেই।

আমরা জনগণ যখন কোন সরকারকে ক্ষমতায় বসাই, তখন তাদের প্রধান দায়িত্ব হলো দেশের ও জনগণের নিরাপত্তার জন্যে সম্ভব সব কিছুই করা। আর আমরা সবাই নিরাপত্তা চাই। কিন্তু এ কথাটাও আমাদের জনগণের জানা আছে যে নিরাপত্তার জন্যে একটি সরকার যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আর ঐ সিদ্ধান্তের জন্যে কারোও সুবিধা বা কারোও অসুবিধা হতেই পারে। তবে একটি দেশের সার্বিক নিরাপত্তার জন্যে সামান্য ত্যাগ স্বিকার আমাদের করতেই হবে। আর একেই বলে সরকারকে দেশ চালানো বা দেশের নিরাপত্তার জন্যে জনগণের সহায়তা। যেটা উন্নত বিশ্বের সকল রাষ্ট্রেই বিদ্যমান। এমন কি অনেক উন্নত রাষ্ট্র আছে যেখানে সরকারী যে কোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কেউ টু-শব্দটাও করেনা বা করতে পারে না। আর মিডিয়া বিশ্বের প্রায় ৯০% উন্নত রাষ্ট্রেই নিয়ন্ত্রিত। অথচ ঐ সকল রাষ্ট্রই আবার বাংলাদেশের মিডিয়ার জন্যে মায়া কান্না করতে করতে চোখে ঘাঁ করে ফেলে। অথচ, বাংলাদেশের মিডিয়া যে স্বাধীনতা ভোগ করে তার কানাকড়িও অনেক উন্নত রাষ্ট্রের মিডিয়া ভোগ করে না। তাদের নিউজ প্রকাশের আগে সেন্সর নিতে হয়। আর আমাদের দেশে সেন্সরতো দুরে থাকে, মনের মাধুরী দিয়ে মিথ্যাকে সত্য আর সত্যকে মিথ্যা বানাতে কে কত অগ্রসরমান তার প্রতিযোগিতা হয়, এরপরও আমাদের দেশে মিডিয়া স্বাধীন নয় !

এবার আসি, ফেইসবুক ও অন্যান্য যোগাযোগের সহযোগী মাধ্যম গুলোর বন্ধ ও তাতে ক্ষুব্দ জনগনের মতামতের বিষয়ে। আমি এখানে সহযোগী বলে উল্লেখ করেছি। কারন, বাংলাদেশের মানুষ ফেইসবুক, ওয়াটসআ্যাপ, ভাইবার ইত্যাদি কবে থেকে ব্যবহার শুরু করেছে ? আশা করি সবাই এ বিষয়ে বেশ ভালোই অবগত আছেন। কিন্তু এখন ফেইসবুক ও ঐ সকল মাধ্যম গুলোর প্রতি মায়াকান্না দেখে মনে হচ্ছে দেশ একেবারেই ধ্বংস হয়ে গেছে !

আজকে একজন স্ব-ঘোষিত সেলিব্রেটির ( মিডিয়া ম্যান)  ফেইসবুক স্টাটাস আমাদের দেউলিয়া মিডিয়ার অতি উৎসাহের কারনে দেখতে পেলাম। তিনি এখন কোরিয়াতে আছেন। সেখান হতে বাংলাদেশে ফিরতে হবে, কিন্তু যে দেশে ফেইসবুক, ভাইবার, ওয়াটআ্যাপ নাই সেদেশে এখন তিনি ফিরতে আগ্রহ পাচ্ছেনা, মনে হচ্ছে জেলখানায় যাচ্ছেন। কিন্তু তিনি যে কোরিয়াতে আছেন, সেখানের অবস্থা কি সেটা কিন্তু বলেন নি ! কারন, তাহলেতো আর চাপামারা সম্ভব নয়। এসকল ভন্ডদের আসলে এ দেশে না থেকে বিশ্বের দেশে তার সকল স্বাধীনতা দিবে সেখানেই যাওয়া উচিত।

ইতিমধ্যে হয়ত অনেকেই জানতে পেরেছেন, ফেইসবুক ও অন্যান্য মিডিয়া বন্ধ করে ২৩টি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সন্ধান সরকারী গোয়েন্দা সংস্থা ও আইটি এক্সপার্টরা শনাক্ত করতে পেরেছেন। এটা কি দেশের কাজে আসছে না ? দেশে পরপর কয়েকটি হত্যাকান্ড হয়ে গেছে। একজন নেত্রী লন্ডনে বসে সবাইকে ফেইবুকের মাধ্যেমে বাংলাদেশে আরব বসন্ত বা বিপ্লব আনতে ঘোষনা দিয়েছিলেন ঠিক ঐ সময়েই ! আবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করার আগে গত কয়েকটি ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি গাড়ী ভাংচুর, জ্বালাও-পোড়াও ও বিভিন্ন রকম নাশকতা করা হয়েছে। কিন্তু এবার হঠাৎ ফেসবুক ও অন্যান্য অনিয়ন্ত্রিত অনলাইন মিডিয়া বন্ধ থাকায় এটা করতে পারে নাই। এতে কি দেশের মানুষের উপকার হয়নি ? সাকা পূত্র হুম্মাম তার যুদ্ধাপরাধী বাবার ফাঁসির পর প্রকাশ্যেই চ্যালেঞ্জ করেছে, পারলে সরকার যেন ফেইসবুক খুলে দিয়ে দেখুক, এরপর নাকি সরকারকে বুঝাবে কত ধানে কত চাল ! জাতি কি এটাই দেখতে চায় ? আজ পর্যন্ত যারা এই ফেইসবুক ও অন্যান্য কিছু যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেয়ার বিরোধীতা করছে, তারা বেশীরভাগই কোন না কোন ভাবে জামায়াত-বিএনপি বা যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতির সাথে যুক্ত বা সমর্থক। তা আমরা যারা অনলাইনে আছি সবাই কমবেশী জানি। এখন যদি কেউ এটাও না জানার ভান করেন, সেটা একান্তই তার ব্যাপার।

সরকার হঠাৎ করেই ফেইসবুক বন্ধ করেন নাই। এর আগে সরকার ফেইসবুক কর্তৃপক্ষের সাথে বসতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তারা তেমন আগ্রহ দেখায় নি। আর দেখাবেই বা কেন ? ফেইসবুক আর আমেরিকার মাঝে দুরত্ব কতটুক ? একটুকুও না। যেটা ফেইসবুক, সেটাই আমেরিকা। আবার ঐ আমেরিকা আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি। চরম বিরোধীতা করেছিল। আমাদের হত্যা করতে সপ্তম নৌ-বহর পাঠিয়ে ছিল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধীতা করে আসছে সেই প্রথম থেকেই। বাংলাদেশ যতই বলছে দেশে কোন আইএস নাই, ততই তারা বারবার দেশে আইএস আছে এটা প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে উঠছে! আইএস যে মেসেজটি দেয়, সেটাও প্রচার করছে আমেরিকা, তার মানে আইএস কে বা কারা তাও আমেরিকা জানে ?!

আমরা সরকারের কাছে নিরাপত্তা চাই, তবে নিজেদের এতটুক ত্যাগ স্বিকার করতে রাজিনা, এটাও কি সম্ভব ? তাই সকলের নিকট আবেদন, ফেইসবুক, ওয়াটসআ্যাপ, ভাইবার ইত্যাদি যোগাযোগের (ঐচ্ছিক) মাধ্যম বন্ধ রেখেও যদি দেশের নিরাপত্তা ও সার্বিক উন্নয়নে সরকার চেষ্টা করেন, তবে আমাদের নাগরিক হিসাবে সরকারকে অবশ্যই সহায়তা ও সমর্থন দিয়ে যাওয়াটা বেশী দরকার। নতুবা, একটি দেশের সরকারের একার পক্ষে সে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা দেয়া কোনদিনই সম্ভব নয়, তাতে যতটি বাহিনীই থাকুক।

আসুন, আমরা সরকারকে সমর্থন দিই, সহায়তা করি। বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র বানানোর দেশী ও আন্তর্জাতিক ষরযন্ত্র রুখে দেই।

Leave a comment

Filed under ফেস বুক, যুদ্ধাপরাধের বিচার, রাজনীতি

আপনার মতামত দিন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.